প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ২০:৪২
সাহিত্য একাডেমীর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেন লেখক ও সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন

গঠনতন্ত্র মোতাবেক ৬০ দিন পূর্বে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করায় এবং পুরানো তালিকার সাধারণ সদস্যদের পুনর্বহাল না করায় আসন্ন সাহিত্য একাডেমীর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সদস্য ও এডহক কমিটির সাবেক সদস্য, চাঁদপুর লেখক পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের আগে নির্বাচনের প্রাথমিক পদক্ষেপকালে সম্ভাব্য মহাপরিচালক প্রার্থী হিসেবে অনেকের সাথে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত বুধবার (২১ মে ২০২৫) চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী ঘোষিত নির্বাচন তফসিলটি ছিলো পক্ষপাতদুষ্ট ও দূরভিসন্ধিমূলক। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক ভোটার দিয়ে নির্বাচনকালে কারসাজি হয় চরম পর্যায়ে। খোদ প্রার্থীই যদি এডহক কমিটিতে সদস্য বাছাই করেন, তাহলে সেটার কতোটুকু নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকে? পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সাহিত্য একাডেমী গঠনতন্ত্র মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে না। প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করার পর সাধারণ সদস্য করানো হয়েছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। এতে করে গঠনতন্ত্রের লংঘন দেখা দিয়েছে অতিমাত্রায়। সম্প্রতি ১২০জনের ভোটার তালিকা অসম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হয়েছিলো গণমাধ্যমে। দুঃখের বিষয় হলো, ২০১২ সালের ২২০ জন সাধারণ সদস্যের তালিকা ২০২২ সালে এসে দাঁড়ায় ১৪১ জনে। ৭৯ জন সদস্য কেনো বাদ পড়লো সেটা অজানাই রয়ে গেলো সাধারণ সদস্যদের। এমন পরিস্থিতিতে চাঁদপুর লেখক পরিষদ ২০১২ সালে প্রণীত ভোটার তালিকা পুনর্বহালের দাবিতে গত ১৩ জুন-২০২৪ খ্রি: তারিখে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে, যা চাঁদপুরের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক পুরানো তালিকা থেকে যারা মৃত সেসব সাধারণ সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন সাধারণ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে ২২০ জনের ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে লক্ষ্য করা গেলো যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের তালিকা থেকে ১০০ জনকে বাদ দিয়ে দেয় একই এডহক কমিটি। এতে করে অনেক সদস্য সংক্ষুব্ধ এবং হতবাক হয়েছেন। হাস্যকর ব্যাপার হলো, ২০২৪ সালে নতুন সাধারণ সদস্য তালিকায় স্থান নেয়া ব্যক্তিরাই এডহক কমিটিতে এসে পুরানো সাধারণ সদস্যদের বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এহেন ঘটনাটি পুরোপুরি সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্র পরিপন্হী হিসেবে বিবেচিত। খুবই হতবাক ও মর্মাহত হই, যখন সাহিত্য একাডেমী কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমগুলোতে ঘোষণা দেন, 'দীর্ঘদিন একাডেমীর কার্যকরী পরিষদ না থাকায় সদস্য তালিকাসহ বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া যায়নি। যার ফলে একাডেমীর সাধারণ সদস্যদের সঠিক তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। একাডেমীতে বর্তমানে সংরক্ষিত বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করে সাধারণ সদস্যদের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে।' ( তথ্যসূত্র: দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ, ১৯ মার্চ-২০২৫)। প্রশ্ন জাগে, সাহিত্য একাডেমীর নথিপত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব কার? বাকি সদস্যদের কাগজপত্র পাওয়া গেলো কীভাবে? এর দায় কার? নথিপত্র পাওয়া যায়নি এ অজুহাতে সদস্য তালিকা থেকে বাদ যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না এবং গ্রহণযোগ্য নয়। আরেকটি বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, ২০২৪ সালে নতুন করে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর তিন মাসের মাথায় প্রাথমিক সদস্য থেকে ৭০ জনকে সাধারণ সদস্যের তালিকায় আনা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই গঠনতন্ত্রের অধ্যায়-২, ধারা ১১(খ) মোতাবেক সাধারণ সদস্য হবার যোগ্যতা রাখে না। অবিলম্বে নতুন ৭০ জন সদস্য যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে সাধারণ সদস্য না করায় ইতিমধ্যে এ বিষয়টির ব্যাপারে সাহিত্য একাডেমীর সংশ্লিষ্ট অনেকেই কম-বেশি অবগত আছেন। তিনি আরও বলেন, সাহিত্য একাডেমী সচল করা দরকার। কমিটি গঠনই সাহিত্য একাডেমী সচল রাখার কেবলমাত্র পন্থা হতে পারে না। সাহিত্য একাডেমীর অচলায়তন দূর করতে বর্তমান এডহক কমিটি ভেঙ্গে নতুন এডহক কমিটি গঠন করা আবশ্যক। বর্তমান এডহক কমিটির ওপর অনেকেরই আস্থা ও বিশ্বাস নেই। নির্বাহী কমিটির পদ বাগালেই সাহিত্য একাডেমী সচল হবে--এমনটি কথা নয়। এর প্রমাণ রেখেছে চাঁদপুর লেখক পরিষদ। কারণ, নির্বাহী কমিটিতে চাঁদপুর লেখক পরিষদের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক কাউকে রাখা হয়নি। বিগত ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি সাহিত্য একাডেমী শিশু একাডেমীতে রূপান্তরের সিদ্ধান্তে ছিলো তৎকালীন জেলা প্রশাসকের। এর প্রতিবাদে চাঁদপুর লেখক পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে। চাঁদপুর লেখক পরিষদের দাবির মুখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাহিত্য একাডেমীকে অন্যত্র হস্তান্তরের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন। এ সাহিত্য একাডেমী স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে বলে চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীরা সাহিত্য চর্চা করতে পারছে। তাই চাঁদপুর লেখক পরিষদের সদস্যরা গর্ববোধ করছে। সাহিত্য একাডেমীতে চাঁদপুর লেখক পরিষদ সাহিত্যকর্ম করে একাডেমীকে সচল রেখেছে। এতদসত্ত্বেও এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাহিত্য একাডেমীর বিভিন্ন সময়ের নেতৃত্বের দ্বারা বৈষম্য ও অবহেলার শিকার। তথাপিও চাঁদপুর লেখক পরিষদ এবং আমিও চাই সাহিত্য একাডেমী সচল হোক, সাহিত্য একাডেমীতে আরও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসুক। সাহিত্য কর্মীদের মাঝে বিভাজন দূর হোক। সম্প্রীতির বন্ধন প্রতিষ্ঠা পাক। তাই সাহিত্য একাডেমীকে গঠনতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনা হোক। সাহিত্য একাডেমী পুনরুজ্জীবিত করতে ২০১২ সালের সাধারণ সদস্য পুনর্বহাল করতে হবে। পাশাপাশি পুনরায় নতুন সদস্য সংগ্রহের পর সাধারণ সদস্য ৩ মাসের মধ্য নির্ধারণ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলে সকল বিতর্কের অবসান হবে। গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পথ চলতে তিনি জেলা প্রশাসককে আহ্বান জানান। গঠনতন্ত্রের অধ্যায় ১০, ধারা ৩৫ (খ) মেনে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেয়ার জোর অনুরোধ জানান। অন্যথায় এ নির্বাচন 'প্রহসন' বলে আখ্যা দেন তিনি। বিশেষ দ্রষ্টব্য : অধ্যায় ১০, ধারা ৩৫ (খ)তে স্পষ্ট বলা আছে, "নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কমপক্ষে ৬০ (ষাট) দিন পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিধি প্রণয়ন করিবেন এবং নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন করাইয়া লইবেন। উল্লেখিত নির্বাচন বিধি নির্বাচন বিজ্ঞপ্তির সাথেই প্রকাশ করিতে হইবে।"