প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ২৩:৫১
জাতীয় পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতা
ব্রোঞ্জ মেডেল অর্জনে চাঁদপুরের তিন শিক্ষার্থীর সাফল্য

ড্রিম বাংলাদেশের আয়োজনে গত শুক্রবার (৩০ মে ২০২৫) বনশ্রী, আফতাবনগর, ঢাকায় অবস্থিত ইম্পেরিয়াল কলেজে বাংলাদেশের সেরা স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে জাতীয়ভাবে বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় চাঁদপুরের তিন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীরা হচ্ছে : আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্র নাজমুস হাসান শান্ত, অরিত্র রায় এবং হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মাহাদী রহমান।
প্রতিযোগিতাটিতে ৫টি বিভাগে ১২০টির মতো টিম অংশগ্রহণ করে। তারাই একমাত্র টিম চাঁদপুর থেকে ব্রোঞ্জ মেডেল, সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট অর্জনের মাধ্যমে তৃতীয় হয়। তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক সোলার হুইল চেয়ার।
তিন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা যায়, আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটি হচ্ছে সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়া একটি হুইল চেয়ার। এই চেয়ারটি সোলার সিস্টেমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে নিরাপদে চলবে এবং সামনে কোনো কিছুতে বাধাপ্রাপ্ত হলে সেটি তার সেন্সরের মাধ্যমে থেমে যাবে ও শব্দ করবে এবং দিক পরিবর্তন করবে। এছাড়া চেয়ারটিতে তারা কিছু ফিচার অ্যাড করবে। যেমন : ভয়েস কন্ট্রোলার (যার মাধ্যমে ভয়েস শুনে হুইল চেয়ারটি কন্ট্রোল হবে), জিপিএইচ (এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারবে তারা কোন্ স্থানে আছে) এবং রিমোট কন্ট্রোলার । তাদের এই ডেমো মডেলটি তৈরি করতে লেগেছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ টাকার মতো। যদি এটি বাস্তবে তৈরি করা হয়, সাধ্যের ভেতরেই মানুষ ক্রয় করতে পারবে। এ রকম হুইল চেয়ার তৈরি করার কারণ হচ্ছে, পৃথিবীতে অনেক অক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে, যারা চলাফেরা করতে পারে না এবং তাদের অন্যের সহযোগিতা নিয়ে হুইল চেয়ারে চলতে হয়। তাদের কথা চিন্তা করেই তারা এই আবিষ্কারটি করেছে, যাতে তারা অন্যের সহযোগিতা ছাড়াই নিরাপদে চলতে পারে। এছাড়া ১২০ বছর পর পৃথিবী থেকে কয়লা ও তেল হারিয়ে যাবে। যদি এগুলো হারিয়ে যায়, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারাই প্রথম পরিবেশবান্ধব হুইল চেয়ারটি তৈরি করেছে।
শিক্ষার্থীরা চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে তাদের এ অর্জন ও উৎসাহ দেয়ার পেছনে ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সহ-সভাপতি ব্যভিন্টন দাশ কিরণ এবং চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি কাজী আজিজুল হাকিমকে কৃতজ্ঞতা জানান।
এ বিষয়ে ব্যভিন্টন কিরণ দাস বলেন, চাঁদপুরে একটি শিক্ষা উৎসব হয়। এই শিক্ষা উৎসবে ড্রিমস অফ বাংলাদেশে যারা গত দু বছর মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে, তারা আমাদেরকে এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানায়। তারই ধারাবাহিকতায় আমার কয়েকজন ছাত্রকে এ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলি। প্রথমে তারা গুরুত্ব না দিলেও পরে তারা প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বুঝে এবং দুদিনে প্রজেক্টটি তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং অংশগ্রহণ করে। তাদের এ অর্জন সত্যিই চাঁদপুরের জন্যে এবং নিজেদের জন্যে গর্বের। ৭ম ওয়ার্ল্ড ইনোভেনশন কম্পিটিশন এন্ড এক্সিভিশন ও ইন্দোনেশিয়া ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন যৌথ উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের যে প্রতিভা ও সৃজনশীলতার বিকাশ করছে, তা সত্যিই অসাধারণ। তাদের এই আবিষ্কার আরো আপডেট করতে পারলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবে এবং চাঁদপুরের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। তাই তারা চাঁদপুরের সকল মহলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।